আস-সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু আমাদের সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে আন্তরিক মোবারকবাদ

যেমন ছিলেন তিনি


ইসমাঈল হাবীব।

একজন মু'মিনের জন্য জীবনের প্রতিটি কাজকর্মে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ ও অনুকরণ করা অপরিহার্য। মুমিনের আমল ইবাদাত আল্লাহর দরবারে কবুলের সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি হলো সেটি অবশ্যই রাসুলের তরীকা মোতাবেক হওয়া। এ কেবল ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয়, বরং জীবনের নানান উত্থান পতনে দূর্যোগ দুর্বিপাকের মাঝেও সুন্নতে নববীর অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। যার ফলে রাসুলের অনুযায়ী জীবন পরিচালিত হয়,অন্যদিকে জীবনের জন্য সঠিক ও উত্তম পাথেয় পাওয়া যায়।এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে হাকীমে বলেন; তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ তাআলা ও শেষদিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মাঝে রয়েছে উত্তম জীবন ব্যবস্থা (সূরা আহযাব আয়াত—২১)অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন; যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে সাবধান থাকে, তারাই হলো সফলকাম। (সূরা নূর, আয়াত—৫২) উপরোক্ত আয়াতে কারীমা থেকে একথা সুস্পষ্ট হলো, মানবজীবনের সফলতা ও উত্তমভাবে জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন ব্যবস্থাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা অপরিহার্য এবং এরই মাঝে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুম রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুণ্যময় সান্নিধ্যে থেকে লাভ করেছিলেন জীবনে চলার পথে উত্তম পাথেয়। নবিজীর আচরণ আখলাক, দ্যুতি ছড়ানো পুষ্পিত কথামালা, ইত্যাদি তাদেরকে মুগ্ধ করে তুলতো। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তারা সেগুলো আমলে আখলাকে বাস্তবায়ন করেছিলেম এবং পরবর্তীকালে তাবেয়ীদেরকে আমানত সরূপ বলেছেন। কেমন ছিল তার মুখাবয়ব ; রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গঠন ও গড়ন এতসুন্দর ছিল যে, সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করতে গিয়ে হিমহিশ খেয়ে যেতেন।পরিশেষে হাদীসের শেষাংশে একথা বলতে দিতেন,তিনি এর চেয়েও অধিক সুন্দর ছিলেন। আসুন হাদীসের দিকে একটু নজর দেই,হযরত বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন; রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যম গড়নের ছিলেন। তার উভয় বাহুমূলের মধ্যবর্তী স্থান অন্য মানুষের তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার ঘন কেশরাশি উভয় কানের লতি পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিল। তাঁর পরনে ছিল লাল( ডোরাকাটা) চাদর ও লুঙ্গি। আমি তাঁর চেয়ে অধিক সুন্দর কিছু দেখিনি। আরেক সাহাবির বর্ণনা দেখুন—হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন; রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতি লম্বা ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না (মাঝারি গড়নের চেয়ে ঈষৎ লম্বা ছিলেন) তিনি ধবধবে সাদা ছিলেন না, আবার সম্পূর্ণ তামাটে (গোধুম)বর্ণেরও ছিলেন না (পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় ছিলেন)। তার মাথার চুল একেবারে কুঞ্চিত ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না(বরং ঈষৎ কোঁকড়ানো ঢেউ খেলানো ছিল)।কেমন ছিল চরিত্র মাধুরী; রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বাণী;'এবং নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী' (সূরা কলাম আয়াত— ৪)রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীর্ঘ দশবছর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত সাহাবি হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন; রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন চরিত্রের বিচারে এক উত্তম মানব।হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহুা থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কাজ সাদামাটাভাবে সম্পাদনা করলেন। এ সংবাদটি তৎক্ষনাৎ সাহাবায়ে কেরামের মাঝে চাঞ্চল্য তৈরী করলো। তারা সেই কাজটি সাদামাটাভাবে সম্পাদনা করতে না পছন্দ করলেন। এ বিষয়টি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছলে তিনি সকলকে সমবেত করে বক্তব্য দিয়ে বললেন; কী হলো লোকদের? যারা শুনেছো আমি কাজটি সাধারণভাবে সম্পাদনা করেছি, এরপর তারা তা থেকে অপছন্দ করেছে, এবং তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছে, তারা শুনে নাও, আমি আল্লাহর ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত এবং তার ভয়ে সবচে' বেশি কম্পিত।ইখলাস ও তাকওয়া; একজন মু'মিনের জীবনে আমল করার ক্ষেত্রে ইখলাস থাকা খুব জরুরী। ইখলাস-বিহীন আমল কাল কেয়ামতে কোন কাজে আসবে না।নববী জীবনের দিকে তাকালে এ বিষয়টি স্পষ্ট ও ভালোভাবে বুঝে আসে। ধর্মীয় রীতিনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছেন। কিন্তু বিপত্তি বাধলো অন্য জায়গায়,হিজরতকারী এক সাহাবির উদ্দেশ্য ছিল অন্যরকম। তিনি একজন রমণীকে বিবাহ করার জন্যই হিজরত করেছিলেন। এ ঘটনার পর সকল কাজের মূল্য ও মান বর্ণনা করার জন্য রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসটি বলেছেন। আরেকটি হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন; আমি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভর করে, অর্থাৎ নিয়তের উপর ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে। প্রিয় পাঠক ও বন্ধু! এমনই ছিল রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন চরিত।আল্লাহ তাআলা যাকে পৃথিবীবাসীর জন্য এক আর্দশ শিক্ষকরূপে পাঠিয়েছিলেন। জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি যিনি মানব জীবনের জন্য ছিলেন এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। আসুন, জীবনের নানান কাজকর্মে তার পথ অনুসরণ করি। জান্নাত হোক আমাদের স্বপ্নের ঠিকানা। প্রিয় নবীজির ঘোষনা 'যে আমার সুন্নতকে ভালবাসলো, সে আমি নবিকেই ভালবাসলো, যে আমাকে ভালবাসালো রোজ কেয়ামতে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।



No comments

Theme images by EricHood. Powered by Blogger.